চলে এলাম আরো একটি কলেজের রিভিউ নিয়ে। মূলত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলির চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি দেখা যায়। স্নাতকের উপর একটি ভালো সার্টিফিকেটের পাশাপাশি মানসম্মত কলেজে পড়ার এই সুযোগ কেউই হাতছাড়া করতে চায় না। ঢাকার জনপ্রিয় কয়েকটি কলেজের মাঝে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ অন্যতম।
চলুন তবে আজ এই কলেজটির পরিচিতি, অবস্থান, ইতিহাস, শিক্ষা-কার্যক্রম, কিভাবে ভর্তি হবেন…সমস্ত তথ্য একসাথে জেনে নেওয়া যাক। তবে তার আগে বলে নিই আমাদের আজকের শেয়ার করা প্রতিটি তথ্য গুগল বিশেষ করে উক্ত কলেজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ পরিচিতি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ কলেজ হলো এই হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ। যা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় স্নাতক কলেজগুলির মধ্যে একটি। “জ্ঞান একতা আনে” এই নীতিবাক্যকে পুরোপুরি ফোকাসে রেখে এগিয়ে চলছে কলেজটির প্রতিটি কার্যক্রম। বলে রাখা ভালো কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা একজন নারী।
মূলত মরহুম হাবিবুল্লাহ্ বাহার সাহেবের স্ত্রী আনোয়ারা বাহার চৌধুরী এর ব্যাক্তিগত খরচ এবং তত্বাবধানে গড়ে উঠে এই হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ নামের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে কলেজটির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ডক্টর শাহজাহান মিয়া। এছাড়াও এর অধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত আছেন প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার মিয়া।
ভর্তি কার্যক্রমসহ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম এবং নোটিশ প্রদানের ক্ষেত্রে কলেজটি তার নিজস্ব একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ব্যবহার করে আসছে। যা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মাঝে আইসিটির প্রতি বাড়তি আগ্রহ এবং বাড়তি দক্ষতা তৈরিতে সাহায্য করে আসছে।
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর অবস্থান
এটি মূলত ঢাকার একটি জনপ্রিয় কলেজ। আরেকটু বিস্তারিত বলতে হলে বলবো, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজটির অবস্থান হলো শান্তিনগর, ঢাকা। ১০/এ সার্কিড হাউস রোড ঢাকা ১০০০ এর দিকে গেলেই দেখা মিলবে এই হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর।
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর ইতিহাস
১৯৬৯ সাল এর দিকে স্থাপন করা হয় এই হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ। যা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একাই অবদান রাখেন সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মরহুম হাবিবুল্লাহ্ বাহার সাহেবের স্ত্রী আনোয়ারা বাহার চৌধুরী। সে-সময় পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার মান বাড়িয়ে তোলার ব্যাপারটিকে মাথায় রেখে গড়ে উঠেছিলো হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময় সম্পর্কে জেনে হয়তো বুঝতে পেরেছেন কলেজটি বেশ পুরোনো। শুরুতে এর কার্যক্রম বেশ ছোট-খাটো আকারে শুরু হলেও বর্তমানে এর পরিধি অনেকাংশে বেড়েছে। সাথে বেড়েছে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা!
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর অবকাঠামো
অবকাঠামোগত দিক দিয়ে বেশ পারফেক্ট এই হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ। মূলত বর্তমানে ১ একর জমির উপর পুরো কলেজটি দাঁড়িয়ে আছে। এক্ষেত্রে মূল যে ভবনটি রয়েছে সেই ভবনকে ১২ তলাবিশিষ্ট একটি ভবন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও কলেজটিতে রয়েছে আরো ৪ টি গুরুত্বপূর্ণ ভবন। এসব ভবনের দুইটি মূলত ৫ তলা ভবন, একটি ২ তলা ভবন এবং সবশেষে রয়েছে আরো একটি ৮ তলাবিশিষ্ট ভবন।
পুরো কলেজের অবকাঠামো হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনের পাশাপাশি রয়েছে একটি বিরাট লাইব্রেরি। যাতে রয়েছে প্রায় ১৭,০০০ বইয়ের বিশাল এক কালেকশন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ কলেজের গুরুপূর্ণ কার্যক্রমগুলি পরিচালনা করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে একটি বিরাট সেমিনার কক্ষ। এছাড়াও হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে শোভা পাচ্ছে বিশাল এক শান্ত পুকুর, একটি টেনিস কোর্ট, বড়সড় একটি খেলার মাঠ এবং ১২ তলা ও ৮ তলা ভবনের জন্যে ব্যবস্থা করা পৃথক দু’টি লিফ্ট৷
শিক্ষার্থীদের যেনো কলেজে টিফিন কিংবা খাবার না নিয়ে গেলে ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করার সমস্যায় না পড়তে হয়, সে কথা বিবেচনা করে কলেজটিতে একটি ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে নিয়মিত মানসম্মত খাবার সরবরাহ করায় হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর শিক্ষার্থীরাও যথেষ্ট সন্তুষ্ট। মোটকথা অবকাঠামোগত দিক দিয়ে অন্যান্য কলেজের চাইতে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর কার্যক্রম।
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর শিক্ষা-কার্যক্রম
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর শিক্ষা-কার্যক্রম সম্পর্কে। বর্তমানে কলেজটিতে বাংলাদেশ শিক্ষা-ব্যবস্থার উচ্চ মাধ্যমিক ক্যাটাগরি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে৷ এক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষার্থী মানবিক, ব্যবসা এবং বিজ্ঞান শাখার যেকোনো একটি বাছাই করে নিতে পারবে।
এছাড়াও হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে রয়েছে স্নাতক পাস কোর্স এবং এর পাশাপাশি ২৩ টি বিষয়ের উপর স্নাতক সম্মান কমপ্লিট করার সুযোগ। যারা স্নাতকোত্তর কোর্স করার প্রতি আগ্রহী তারাও চাইলে এই কলেজের আন্ডারে থেকে ৯ টি বিষয়ের মাঝে যেকোনো একটি বিষয় বাছাই করে তার উপর কোর্স করতে পারবে। পাশাপাশি কলেজটিতে শিক্ষা-কার্যক্রমের বাড়তি সুবিধা হিসেবে থাকছে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল সহ আরো ৪ টি বিষয়ের উপর প্রফেশনাল সম্মান কোর্স শেষ করার সুযোগ।
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর সিলেবাস সম্পর্কে যদি বলি তবে বলবো, কলেজটি ২০১৩ – ২০১৪ সালের মধ্যে তৈরি করা সিলেবাস ফোকাস করে এর কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এক্ষেত্রে স্নাতক সম্মান কোর্সটি করতে সময় লাগবে প্রায় ৪ বছরের মতো। স্নাতক পাস কোর্স শেষ করতে লাগবে ৩ বছর এবং স্নাতকোত্তর কোর্স করতে সময় লাগবে ১ বছরের মতো। সবশেষে স্নাতক সম্মান নিয়ে সাজানো প্রফেশনাল কোর্সটি করতে দরকার পড়বে ৪ বছর সময়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি কলেজ হিসেবে অনার্সের শিক্ষার্থীরা লজিক্যালি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। যারা কলেজটির অনুষদগুলি নিয়ে সাজানো একটি লিষ্ট চান তারা নিচের লিষ্টিতে ফোকাস করতে পারেন!
প্রযুক্তি ও প্রকৌশল অনুষদ
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ
সম্পাদনা
হিসাববিজ্ঞান বিভাগ
মার্কেটিং বিভাগ
ব্যবস্থাপনা বিভাগ
অর্থসংস্থান ও ব্যাংকিং বিভাগ
ব্যবসা প্রশাসনে ব্যাচলর (পেশাদার কোর্স)
পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিবিএ (পেশাদার কোর্স)
সমাজবিজ্ঞান অনুষদ
সম্পাদনা
অর্থনীতি বিভাগ
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ
সমাজ কর্ম বিভাগ
গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ
মিডিয়া অধ্যয়ন অনুষদ
থিয়েটার ও মিডিয়া অধ্যয়ন
কলা অনুষদ
সম্পাদনা
বাংলা বিভাগ
ইংরেজি বিভাগ
ইতিহাস বিভাগ
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
দর্শন বিভাগ
গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ বিভাগ
বিজ্ঞান অনুষদ
সম্পাদনা
পদার্থ বিভাগ
রসায়ন বিভাগ
গণিত বিভাগ
পরিসংখ্যান বিভাগ
প্রাণীবিদ্যা বিভাগ
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
প্রাণরসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর পরিবেশ
এবার আসি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর পরিবেশ নিয়ে। দিনের বেশিরভাগ সময় যেহেতু শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানেই কাটিয়ে ফেলে সেহেতু প্রতিষ্ঠানের পরিবেশের দিকেও বাড়তি নজর রাখা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এর পরিবেশ সম্পর্কে।
- কলেজটিতে থাকা বিশাল মাঠ মনকে ফ্রেশ করে তুলবে
- একপাশে থাকা পুকুর শিক্ষার্থীদের ঢাকা-শহরের যান্ত্রিকতাযুক্ত ফিলিংসকে ধ্বংস করবে
- যেসব শিক্ষার্থী টেনিস খেলতে পছন্দ করে তাদের জন্যে থাকা টেনিস কোর্ট পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক ম্যাচিউরিটি তৈরিতে সাহায্য করবে
- শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে থাকা ভালো সম্পর্ক পড়াশোনার প্রতি দ্বিগুণ আগ্রহ তৈরিতে সাহায্য করবে
- চারপাশের গাছপালা শিক্ষার্থীদের একটি শান্ত পরিবেশ উপহার দিবে
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে পড়াশোনা করার সুযোগ-সুবিধা
- মানসম্মত শিক্ষা-কার্যক্রমের সাথে থেকে শিক্ষা-জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি পার করার সুযোগ
- শিক্ষার্থীরা ১৭,০০০ বই দ্বারা ভরপুর লাইব্রেরীতে বসে নিজের মেধাকে জাগ্রত করতে পারবে
- কলেজে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজের মানসিক বিকাশকে সক্রিয় করার সুযোগ পাবে ছাত্র-ছাত্রীরা
- কলেজটির মাধ্যমে একইসাথে এইচএসসিসহ অনার্স, ডিগ্রী কোর্স করা যাবে
- ক্যান্টিনে পাওয়া যাবে মানসম্মত খাবার-দাবার
- খেলার মাঠ কিংবা টেনিস কোর্ট শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার প্রতি থাকা দক্ষতাকে আরো বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে
- কলেজটিতে থাকা বিভিন্ন ক্লাব শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সম্পর্কিত বিভিন্ন দক্ষতা তৈরিতে সাহায্য করবে
- পড়াশোনার খরচের ক্ষেত্রে রয়েছে কলেজ কতৃপক্ষের বিশেষ ছাড়
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বের হওয়ার সুযোগ
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে ভর্তি যোগ্যতা
বর্ণনা শুনে হয়তো অনেকেই হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের প্রতি বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চলুন তবে এবার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে পড়ার ভর্তি যোগ্যতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। কলেজটিতে ভর্তি হতে হলে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের রেজাল্টে সর্বনিম্ব ৪.০০ জিপিএ থাকতে হবে। যারা ব্যবসা শাখা থেকে ভর্তি হবেন তাদের অবশ্যই জিপিএ ৩.৫০ কিংবা এর উপরে থাকতে হবে। সবশেষে মানবিক শিক্ষার্থীদের ঝুলিতে থাকতে হবে কমপক্ষে ২.০০ জিপিএ।
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে পড়াশোনা করার খরচ
হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে পড়াশোনা করার খরচ এর ব্যাপারে যদি বলি তবে শুরুতে বলবো কলেজটিতে পড়ার খরচের ক্ষেত্রে বাড়তি ছাড় এর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেমিস্টার ফি হিসেবে ৪ বছরে প্রায় ৫৬,০০০ টাকার উপরে ফি আসতে হবে। তবে এই এমাউন্টটা আবেদন ফি এবং ভর্তি ফি যোগ করে তবেই সিলেক্ট করা হয়েছে।
ইতি কথা
যারা ইতিমধ্যেই এইচএসসি পাশ করে স্নাতক কোর্সে ভর্তি হতে চান তাদের জন্যে এই হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ হতে পারে পার্ফেক্ট চয়েজ। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে যারা শিক্ষা-জীবনের এই অংশটি কাটাতে চান তারাও নির্দ্বিধায় এই কলেজটিতে পড়াশোনা শুরু করে দিতে পারেন৷ আশা করি আমাদের আজকের এই আয়োজন আপনাকে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ সম্পর্কে জানতে কিছুটা হলেও সাহায্য করেছে এবং আমরা এতেই ধন্য।