বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল তথ্য জানুন! প্রিয়তথ্য.কম
" " "
"
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল তথ্য জানুন!

রিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : ”জ্ঞানই শক্তি” এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১৯১২ সালের ২৪ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বাংলাদেশের ৩৩তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাস বরিশাল বিভাগের কীর্তনখোলা নদীর পূর্ব তীরে কর্ণকাঠিতে অবস্থিত। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

শুরু থেকেই মানসম্মত শিক্ষাদানের ব্যাপারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় শিল্প-সাহিত্য বিকাশে সবসময় সরব থাকে। সাজানো-গোছানো ও পরিকল্পিত অনুষ্ঠান ছাড়াও ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ক্যাম্পাসে গল্প-আড্ডার আসর বসে।

" " "
"

আজ আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ভর্তি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সহ আনুসঙ্গিক সকল তথ্য থাকবে। অনুগ্রহ করে বিস্তারিত পড়তে থাকুন। 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপিত হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ১৯৬০ সালে। ১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেল’স পার্কের জনসভায় বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এরপরে ১৯৭৯ সালের ২৩ নভেম্বর বরিশাল সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের সভায় এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

" " "
"

কিন্তু এই প্রস্তাবও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। পরবর্তীতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৫ সালে খুলনা বিভাগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। তখন বরিশাল শহরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে টাউন হলে অনশন পালিত হয়, কিন্তু কোন ফলাফল আসেনি।

সবশেষে দীর্ঘ ২৫ বছর পরে আওয়ামী লীগ সরকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। ২০০৯ সালে জরুরী ভিত্তিতে মহাজোট সরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে এবং ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব সরকার অনুমোদন করে। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।

অনুষদ ও বিভাগসমূহ

বর্তমানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ টি অনুষদের অধীনে মোট ২৪ টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলোঃ

ক্রমিকঅনুষদবিভাগ
জীববিজ্ঞান ও কৃষি অনুষদসায়েন্স এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগবোটানি এন্ড ক্রপ সায়েন্স বিভাগকোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টবায়োকেমিস্ট্রি এন্ড বায়োটেকনোলজি
বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদগণিত বিভাগকম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংরসায়ন বিভাগপদার্থবিজ্ঞান বিভাগজিওলজি এন্ড মাইনিং বিভাগপরিসংখ্যান
কলা এবং মানবিক অনুষদইংরেজি বিভাগবাংলা বিভাগদর্শন বিভাগইতিহাস ও সভ্যতা
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদঅর্থনীতি বিভাগলোক প্রশাসন বিভাগরাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগসমাজ বিজ্ঞান বিভাগগণযোগাযোগ ও সাংবাদিতকা
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদএকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগমার্কেটিং বিভাগফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ
আইন অনুষদআইন বিভাগ

ভর্তি প্রক্রিয়া – বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ৪ টি ইউনিটে ভাগ করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এবং জীববিজ্ঞান অনুষদে ভর্তিচ্ছুকদের জন্য এ ইউনিট, কলা সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদে ভর্তিচ্ছুকদের জন্য বি ইউনিট এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ভর্তিচ্ছুকদের জন্য সি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া যারা শাখা পরির্তন করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য ডি ইউনিটে পরীক্ষা নেওয়া হয়।

ভর্তির যোগ্যতা

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা ইউনিটভেদে কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে। নীচে বিস্তারিত বিবরণ দিচ্ছি।

এ ইউনিট (বিজ্ঞান): মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয় সহ মোট জিপিএ ৭ থাকতে হবে। তবে কোন পরীক্ষায় জিপিএ ৩ এর নীচে থাকতে পারবে না।

বি ইউনিট (মানবিক): মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয় সহ মোট জিপিএ ৬ থাকতে হবে। তবে কোন পরীক্ষায় জিপিএ ৩ এর নীচে থাকতে পারবে না।

সি ইউনিট (বাণিজ্য): মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয় সহ মোট জিপিএ ৬.৫ থাকতে হবে। তবে কোন পরীক্ষায় জিপিএ ৩ এর নীচে থাকতে পারবে না।

ডি ইউনিট: উপরোক্ত তিনটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ডি ইউনিটের জন্য নির্ধারিত বিভাগে ভর্তি হওয়া যাবে।

ভর্তির আবেদন

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইন এর মাধ্যমে ৫০০ টাকা ফি প্রদানপূর্বক আবেদন করতে হবে। টেলিটক সিম ব্যবহার করে আবেদন করতে হবে। মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে BU লিখে এইচএসসি শিক্ষা বোর্ডের নামের কিওয়ার্ড লিখতে হবে। এরপরে স্পেস দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার রোল নম্বর স্পেস এইচএসসি পরীক্ষার সাল লিখতে হবে। 

তারপরে এসএসসি শিক্ষা বোর্ডের নামের কিওয়ার্ড স্পেস এসএসসি পরীক্ষার রোল নম্বর স্পেস এসএসসি পরীক্ষার সাল লিখতে হবে। এগুলো লেখা হলে স্পেস দিয়ে কাংখিত ইউনিটের কিওয়ার্ড লিখে কোটা থাকলে স্পেস দিয়ে কোটার কিওয়ার্ড লিখতে হবে। এগুলো লেখা সম্পন্ন হয়ে গেলে ১৬২২২ নম্বরে সেন্ড করতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল তথ্য জানুন!

পরীক্ষা ও মানবন্টন

শিক্ষার্থীদেরকে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। এ ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীববিদ্যা ও আইসিটি বিষয়ের উপর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। বি ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের উপর প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সি ইউনিটের পরীক্ষার্থীদের বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটিতে ২৫ মার্কের পরীক্ষা দিতে হবে।

মেধা তালিকা

মেধা তালিকা তৈরি করার জন্য ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের অর্জিত মেধাস্কোরের ক্রমানুসার মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এক্ষেত্রে, মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় ৪র্থ বিষয় ছাড়া প্রাপ্ত জিপিএ কে ১৫% হিসাব করা হবে। উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় 4র্থ বিষয় ছাড়া প্রাপ্ত জিপিএ কে ২৫ % এবং ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরকে ৬০% আপেক্ষিক গুরুত্ব দিয়ে মোট ২০০ নম্বরের উপর মেধাস্কোর করা হবে। এই মেধাস্কোরের ক্রমানুসারেই মেধা তালিকা তৈরি করা হয়। অ্যাসাইনমেন্ট লেখার সঠিক নিয়মাবলী জেনে নিন!

আসন সংখ্যা

সবগুলো ইউনিট মিলিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এর আসন সংখ্যা ১৪৪০ টি। এর মধ্যে এ ইউনিটের আসন সংখ্যা ৫৮০ টি, বি ইউনিটের ৫৬০ টি এবং সি ইউনিটের আসন সংখ্যা ৩০০ টি।

ক্যাম্পাস

৫০ একর জায়গায় অবস্থিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যাল ক্যাম্পাসে ৬ তলা বিশিষ্ট দুইটি একাডেমিক ভবন ও ৬ তলা বিশিষ্ট দুইটি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। এখানকার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি ৪ তলা ভবন বিশিষ্ট যার নাম ”শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া একটি ৫ তলা ভবন যার একটি অংশ টিএসসি হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে অবস্থিত। তাছাড়া চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য এখানে একটি ৪ তলা বিশিষ্ট আলাদা মেডিকেল সেন্টার রয়েছে।

ক্যাম্পাসে অন্যান্য ভবনগুলোর মধ্যে উপাচার্যের বাসভবন, দুইটি ডরমিটরি এবং একটি শিক্ষক আবাসিক ভবন রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য একটি পুলিশ ক্যাম্প এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি সাবস্টেশনও রয়েছে।

আবাসিক হলসমূহ – বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জন্য ২টি আবাসিক হল রয়েছে। 

১. বঙ্গবন্ধু হল: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে নির্মিত 5 তলা বিশিষ্ট এই হল দুইটি ব্লকে বিভক্ত। এখানে মোট 81 টি আবাসিক কক্ষের মোট আসন সংখ্যা 610 টি।

২. শেরে বাংলা হল: 5 তলা বিশিষ্ট এই হলটিও দুইটি ব্লকে বিভক্ত এবং 81 টি আবাসিক কক্ষের আসন সংখ্যা 610 টি।

ছাত্রীদের জন্য এখানে শেখ হাসিনা হল নামে একটি হল রয়েছে এবং ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল নামে ৯ তলা বিশিষ্ট একটি হল নির্মানাধীন রয়েছে। 

১. শেখ হাসিনা হল: 5 তলা বিশিষ্ট দুইটি ব্লকে বিভক্ত এই হলটির ও আবাসিক কক্ষের সংখ্যা 81 টি এবং আসন সংখ্যা 610 টি। 

উপসংহার

দক্ষিণবঙ্গের বাতিঘর খ্যাত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষা বিস্তারে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে চলেছে। তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও স্বতন্ত্র প্রচেষ্টায় এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সৃজনশীল সংগঠন। হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ও ভালবাসায় নিয়ে দক্ষিণবঙ্গের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ গবেষণা ও খেলাধুলায় বেশ গতিশীল। আমাদের প্রত্যাশা জ্ঞানের মুক্ত চর্চার মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক জীবনকে জানার সেরা ঠিকানা।

" " "
"

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top