সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল তথ্য জানুন! প্রিয়তথ্য.কম
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর সকল তথ্য জানুন!

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নত করার লক্ষ্যেই মূলত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সিলেট শহরের টিলাগড়ে অবস্থিত এটি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষিক্ষেত্রে শিক্ষাদান এবং দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে কাজ করা এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে অনেক অনেক সফলতা। 

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

এখানে উদ্ভাবিত অনেক প্রযুক্তি সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। অত্র অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের গবেষণা দেশব্যাপি প্রশংসা পেয়েছে। আজ আমরা এই বিশ্ববিদ্যলয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। জানবো এখানকার ভর্তি তথ্য সহ আনুসঙ্গিক অন্যান্য তথ্য। 

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

২০০৬ সালের ২ নভেম্বর বিলুপ্ত সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে একটি অনুষদে রূপান্তর করা হয় এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। প্রথমে এর অনুষদ ছিল ৩ টি, যা পরবর্তীতে বৃদ্ধি পায়। সিলেট বিভাগীয় শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য কৃষি শিক্ষা প্রসার।

কৃষি প্রধান আমাদের দেশকে অগ্রসরমান বিশ্বের সাথে সঙ্গতি রক্ষা বা সমতা অর্জনের জন্য এখানে উচ্চতর শিক্ষা ও বিভিন্ন ধরণের গবেষণার সুযোগ তৈরি করা হয়। কৃষি বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও অন্যান্য বিষয়ে গবেষণার মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রথম থেকেই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রেখে চলেছে।

সফলতা

সিলেট এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে এই বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত অনেক বেশি ভূমিকা রেখেছে। সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের কাজ করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। যে সমস্ত অঞ্চলে বছরে ৭/৮ মাস পানি থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টায় সেখানকার মানুষের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। 

শীতকালে হাওর অঞ্চলে মাঠের পর মাঠ ফাঁকা থাকতো, কোন ফসল হতো না। সুনামগঞ্জের দেকার হাওর সহ বেশ কিছু অঞ্চলে এই সমস্যা দূর করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। আগাম ধান চাষের লাগসই প্রযু্ক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে এই সমস্ত প্রান্তিক জনপদের উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। 

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ শিমের নতুন দুইটি জাত উদ্ভান করেছে। এই জাতের শিমগুলো সার বছরই চাষ করা সম্ভব। তাছাড়া টমেটোরও নতুন জাত এখানে উদ্ভাবিত হয়েছে, যা চাষ করতে শীতকালের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। মোটামুটি সারা বছরই এই শিম ও টমেটোগুলো সম্পূর্ণ সিলেটবাসীর চাহিদা মেটাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ডিমের খোসার পুরুত্ব নির্ণয় পদ্ধতি গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কার করেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। গবাদিপশুর বর্জ্য ও রক্ত থেকে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি উদ্ভাবন, অটোমেটেড এগ্রোমেটিওরোজিক্যাল স্টেশন স্থাপন, স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন সহ আরো অনেক সফলতা রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। যে কারণে এখানকার একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করেছেন। 

অনুষদ ও বিভাগসমূহ

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শুরুতে ৩ টি অনুষদ নিয়ে কার্যক্রম আরাম্ভ করলেও বর্তমানে এখানে ৬ টি অনুষদে মোট ৪৭ টি বিভাগ রয়েছে। তাছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত একটি মাঠ গবেষণা কেন্দ্রসহ উন্নত ল্যাবরেটরি এবং একটি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল রয়েছে। 

ক্রমিকঅনুষদবিভাগ
ভেটেরিনারি, এনিম্যাল ও বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স অনুষদএনাটমি এন্ড হিস্টোলজি বিভাগফিজিওলজি বিভাগফার্মাকোলজি বিভাগমাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগমহামারী সংক্রান্ত বিদ্যা ও জনস্বাস্থ্য বিভাগপশুর পুষ্টি বিভাগপ্রাণীসম্পদ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগদুগ্ধ বিজ্ঞান বিভাগপোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগজীনতত্ত্ব ও পশু প্রজনন বিভাগপ্যারাসাইটোলজি বিভাগপ্যাথলজি বিভাগমেডিসিন বিভাগসার্জারি ও থেরিওজেনোলজি বিভাগ
কৃষি অনুষদকৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগমৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও চা উৎপাদন প্রযুক্তি বিভাগকৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগউদ্যানতত্ত্ব বিভাগউদ্ভিদ রোগতত্ত্ব ও বীজ বিজ্ঞান বিভাগকীটতত্ত্ব বিভাগকৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগকৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগকৃষি রসায়ন বিভাগমৌলিক বিজ্ঞান ও ভাষা বিভাগ
মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদমৎস্য চাষ বিভাগজলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগউপকূলীয় ও সামুদ্রিক মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগমৎস্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগমৎস্য জীববিদ্যা ও কৌলিতত্ত্ব বিভাগমৎস্য প্রযুক্তি ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ
কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদকৃষি অর্থনীতি ও পলিসি বিভাগকৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগকৃষি পরিসংখ্যান বিভাগকৃষি বিপণন ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিভাগকৃষি অর্থসংস্থান ও ব্যাংকিং বিভাগ
কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদকৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগসেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগকম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগকৃষিবিষয়ক নির্মাণ ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগখাদ্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগ
বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদআণবিক জীববিজ্ঞান এবং জীনতত্ত্ব প্রকৌশল বিভাগউদ্ভিদ এবং পরিবেশগত জৈব প্রযুক্তি বিভাগপ্রাণী ও মাছ জৈবপ্রযুক্তিফার্মাসিউটিকাল এবং শিল্প জৈবপ্রযুক্তি বিভাগম্যাক্রোবায়াল জৈব প্রযুক্তি বিভাগজৈব রসায়ন ও রসায়ন বিভাগ
পোস্টগ্রাজুয়েট স্টাডিজ

ভর্তি প্রক্রিয়া – সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যাল সহ দেশের সাতটি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছপদ্ধতিতে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নীচে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো।

আবেদনের যোগ্যতা

এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় যারা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান এবং গিণত বিষয়সহ উত্তীর্ণ হয়েছে কেবল তারাই ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

এসএসসি বা সমমান এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয় বাদে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ এবং সর্বমোট জিপিএ ন্যূনতম ৮.০০ থাকতে হবে।

ও এবং এ লেভেল পাসকৃত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ও লেভেলে অন্তত ৫ টি বিষয়ে এবং এ লেভেলে বিজ্ঞানের অন্তত ২ টি বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ থাকতে হবে এবং সর্বমোট জিপিএ ন্যূনতম ৮.০০ হতে হবে।

আবেদন পদ্ধতি

বিকাশ, রকেট বা নগদ পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফি এক হাজার টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। মোট আসন সংখ্যার চেয়ে ১০ গুণ প্রার্থীকে বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ক্রম অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। 

যেসব প্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় না তাদের প্রদান করা অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে আবেদন সংক্রান্ত প্রসেসিং ফি বাবদ ৩০০ টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর সকল তথ্য জানুন!

পরীক্ষা ও মানবন্টন

এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্টিত হয়। ১ ঘন্টার এই পরীক্ষা একযোগে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়েই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের জন্য এইচএসসি বা সমমান পর্যায়ের পদার্থবিজ্ঞানে ২০, রসায়নে ২০, গণিতে ২০,  প্রাণীবিজ্ঞানে ১৫, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ১৫ এবং ইংরেজিতে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যায়।

মেধাস্কোর

১৫০ নম্বরের ভিত্তিতে মেধাস্কোর তৈরি করা হয়। যেখানে ভর্তি পরীক্ষার নম্বর ১০০, এসএসসি বা সমমানের জন্য ২৫ এবং এইচএসসি বা সমমানের জন্য ২৫ নম্বর নির্ধারণ করা হয়। এই অনুযায়ী ফলাফল প্রস্তুত করে মেধা তালিকা ও অপেক্ষমান তালিকা তৈরি করা হয়। 

আসন সংখ্যা

বাংলাদেশের সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে আসন সংখ্যা মোট ৩৪১৯ টি। যেখানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর আসন সংখ্যা ৪৩১ টি।

আবাসিক হলসমূহ

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-এ মোট ৭ টি আবাসিক হল রয়েছে। যার মধ্যে ৫ টি ছাত্র এবং ২ টি ছাত্রীদের জন্য। এগুলো হলো-

ছাত্র হল

  • জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল
  • হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী হল
  • শাহ এ. এম. এস. কিবরিয়া হল
  • আব্দুস সামাদ আজাদ হল
  • হযরত শাহপরাণ হল

ছাত্রী হল

  • সুহাসিনী দাস হল
  • বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল

উপসংহার

টিলা ও সমতল ভূমি ঘিরে প্রায় ৫০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত কৃষিক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। যে ক্ষেতে আগে ১ টন ধান উৎপন্ন হতো এখন সেখানে ৫-৬ টন ধান ফলছে। উন্নত প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে সহজ করছে চাষপদ্ধতি। প্রতিবছর কৃষি বিজ্ঞানী তৈরি করে ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা দেশে। যাদের মাধ্যমেই হয়তো এক সময় আমরা কৃষি উৎপাদনে অগ্রসরমান বিশ্বের সমকক্ষ হয়ে উঠবো। পৃথিবী সৃষ্টির আগে কি ছিল জানেন কী?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top