ঢাকা মেডিকেল কলেজ : মেডিকেলে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একটি স্বপ্নের নাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ। বাংলাদেশে সরকারী ব্যবস্থাপনাধীনে পরিচালিত ৩৭ টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে এটিকেই অনেকে প্রথম পছন্দ মনে করে। কিন্তু কেন এটিকে আলাদাভাবে দেখা হয়? এখানে এমন কি সুবিধা আছে যার জন্য এটি অন্যগুলোর থেকে আলাদা?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
বাংলাদেশের প্রথম সরকারি পর্যায়ের মেডিকেল কলেজ হিসাবে এই প্রতিষ্ঠানটির সুনাম এবং পরিচিতি অনেক বেশি। অনেক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে জানার আগ্রহ রয়েছে। আজ আমরা এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করবো।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কোথায় অবস্থিত :
ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। এর পাশেই রয়েছে জাতীয় শহীদ মিনার। পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে বুয়েট। ঢাকা মেডিকেল কলেজের তিন দিকে রয়েছে শহীদ মিনার রোড, জহির রায়হান রোড এবং সচিবালয় রোড। এই তিন রাস্তার মধ্যেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর অবস্থান।
প্রতিষ্ঠা
ব্রিটিশ সরকার 1939 সালে প্রথম ঢাকায় একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করে, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে 1945 সালে তারা উপমহাদেশে 3টি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ অন্যতম।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডাঃ মেজর ডব্লিউ জে ভারজিন এবং এই অঞ্চলের প্রসিদ্ধ নাগরিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করে 1946 সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং 10 জুলাই তারিখে ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর যাবতীয় সকল তথ্য!
কমিটির প্রধান ডব্লিউ জে ভারজিনকেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার গুরুদ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। শুরুতে ফিজিওলজি বা এনাটমি ডিপার্টমেন্ট না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলে ক্লাস করতে হতো। একমাস পরে এই দুই বিভাগের জন্য অধ্যাপক পশুপতি বসু এবং অধ্যাপক হীরালাল সাহা শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তবে মেডিকেল কলেজের কোন লেকচার গ্যালারী না থাকায় হাসপাতালের 22 নং ওয়ার্ডে ক্লাস শুরু হয়। পরবর্তীতে 1955 সালে কলেজ ভবন স্থাপিত হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা
বাংলাদেশী নাগরিক যারা এসএসসি এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষাগুলোতে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানসহ উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সাধারণত এইচএসসি পাসের পরে দুই বছর মেডিকেল ভর্তির সুযোগ থাকে। প্রতি বছর এমবিবিএস কোর্সে 230 জন শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়।
এখানে ভর্তির জন্য এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষাগুলোতে মোট জিপিএ হতে হবে কমপক্ষে 9.0। পার্বত্য জেলার প্রার্থী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তা থেকে আগত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই জিপিএ হতে হবে 8.0। তবে কোন পরীক্ষায় গ্রেড পয়েন্ট 3.5 এর চেয়ে কম হলে শিক্ষার্থী আবেদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তাছাড়া এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান বিষয়ে কমপক্ষে গ্রেড পয়েন্ট 3.5 থাকতে হবে।
আবেদন এবং প্রবেশপত্র গ্রহণের পরে শিক্ষার্থীদের একটি লিখিত পরীক্ষায় (এমসিকিউ) অংশগ্রহণ করতে হয়। 100 নম্বরের এই পরীক্ষার সময়সীমা 1 ঘন্টা। পরীক্ষায় 100 টি প্রশ্ন থাকে যেখানে প্রতিটি প্রশ্নের মান 1। সাথারণভাবে পদার্থবিদ্যা থেকে 20টি, রসায়ন থেকে 25টি, জীববিজ্ঞান থেকে 30টি, ইংরেজি থেকে 15টি এবং সাধারণ জ্ঞান, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিষয় থেকে 10টি প্রশ্ন থাকে।
লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি ভূল উত্তরের জন্য 0.25 নম্বর কাটা যাবে। লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য কমপক্ষে 40 নম্বর পেতে হবে এবং শুধুমাত্র কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের মেধাতালিকা সহ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তবে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএকে মোট 200 নম্বর হিসাবে নির্ধারণ করা হয়। মেধাতালিকা প্রণয়ন করার সময় এই নম্বরও মূল্যায়ন করা হয়।
বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক অথবা ‘ও’ লেভেল ’এ’ লেভেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। তাদেরকে পরিচালক, চিকিৎসা শিক্ষা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা বরারব 2000 টাকার ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার সহ আবেদন করতে হবে। সিজিপিএ রূপান্তর করে সমমানের সার্টিফিকেট সংগ্রহ এবং আইডি নম্বর নিতে হবে। সমমান সার্টিফিকেট গ্রহণের সময় এসএসসি সনদপত্রের সত্যায়িত কপি সঙ্গে থাকতে হবে।
কোর্স ও বিষয়সমূহ
মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস কোর্সটি সাধারণত 5 বছর মেয়াদী হয়ে থাকে, যাকে চারটি ফেজে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো ফেজ-1, ফেজ-2, ফেজ-3 এবং ফেজ-4। ফেজ-1 এবং ফেজ-৪ সাধারণত 1.5 বছর মেয়াদী হয়ে থাকে, যেখানে ফেজ-2 ও ফেজ-3 হয় 1 বছর মেয়াদী। প্রত্যেকটি ফেজ এর শেষে একটি প্রফেশনাল পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদেরকে অংশগ্রহণ করতে হয়। তাছাড়া প্রতিটি ফেজ অনুযায়ী আইটেম, কার্ড ফাইনাল, টার্ম ফাইনাল, ওয়ার্ড ফাইনাল ইত্যাদি পরীক্ষাগুলোও হয়ে থাকে।
ফেজ-4 শেষ হওয়ার পরে ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী ডাক্তার হিসাবে পরিচিত হয়। এরপর এক বছরের জন্য ইন্টার্ণ ডাক্তার হিসাবে বাধ্যতামূলকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে একজন ডাক্তার বাংলাদেশে মেডিকেল প্রাক্টিস করার অনুমোতি পেয়ে থাকে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদেরকে মোট 11টি বিষয়ে পড়ানো হয়। এগুলো হলো-
- Anatomy
- Physiology
- Biochemistry
- Forensic Medicine & Toxicology
- Community Medicine
- Pathology & Hematology
- Pharmacology & Therapeutics
- Microbiology & Immunology
- Medicine
- Surgery
- Gynae & Obstetrics
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট 42টি বিষয়ের উপর পোস্টগ্রাজুয়েশন ডিগ্রি প্রদান করে থাকে।
হল
শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজএ দুইটি হল রয়েছে। যার মধ্যে শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বী হল ছেলেদের জন্য এবং শহীদ ডাঃ আলীম চৌধুরী হল মেয়েদের জন্য। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিল্ডিং এর পাশাপাশি ইন্টার্ন ডাক্তারদের জন্য দুইটা হলেই ডাঃ মিলন এর নামে আলাদাভাবে একটি করে ভবন রয়েছে। গ্রামীন অর্থনীতিতে বিপ্লব আনতে ৪টি কৃষি ব্যবসার আইডিয়া!
উপসংহার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এখন পর্যন্ত অসংখ্য স্বনামধন্য ডাক্তার উপহার দিয়েছে। যারা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বর্তমানের এই উন্নত পর্যায়ে আনতে অনেক অবদান রেখেছে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটি নিরলসভাবে মানুষকে যে সেবা দিয়ে এসেছে তা বর্ণণাতীত। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রত্যেককে আমাদের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে যারা এই মেডিকেল কলেজে পড়তে ইচ্ছুক তাদের জন্য রইলো শুভকামনা।