“খুলনা সিটি কর্পোরেশন” বা “খুসিক” এর ইতিহাস অনেক পুরনো। সর্বপ্রথম এটি ছিলো “খুলনা মিউনিসিপ্যাল বোর্ড”, এরপর হয় ” খুলনা মিউনিপ্যাল কমিটি”, তারপর হয় “খুলনা পৌরসভা”। পরে প্রেসিডেন্ট হুসেইন এরশাদ উন্নীত করেন ” খুলনা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন” হিসেবে। সর্বশেষ ১২ই ডিসেম্বর ১৯৮৪ সালে হয় “খুলনা সিটি কর্পোরেশন”।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন / Khulna City Corporation
সাহিত্য সম্রাট এবং খুলনা মহকুমা
১৮৪২ সালে খুলনা মহাকুমা’র জন্ম হয়। অবিভক্ত বাংলার প্রথম মহাকুমা হলো খুলনা। পরে তার পরিধি সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমানের খুলনা ও বাগেরহাট জেলা দুটি নিয়ে ছিল খুলনা মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৬৩ সালে বাগেরহাটে স্বতন্ত্র মহাকুমার কার্যালয় স্থানান্তরিত হয় এবং ১৮৪৫ সালে সেখানে প্রথম দালান কোঠা ওঠে যা আজকে জেলা প্রশসকের বাসভবন।
প্রথম প্রশাসক ছিলেন ডেপুটি মিঃ শোর এবং দ্বিতীয় মহকুমা হাকিম ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি এই বাসভবনে বসে তাঁর উপন্যাস “দুর্গেশ নন্দিনী” রচনা করেছিলেন।
মিউনিসিপ্যালটির ধারাপাত
খুলনা, জেলা শহর হলেও একথা অনেকের জানা নেই যে, এ জেলার প্রথম মিউনিসিপ্যালিটি ছিল সাতক্ষীরায় ১৮৬৯ সালের ১ এপ্রিল এর সময়। জেলার দ্বিতীয় মিউনিসিপ্যালিটির ছিল দেবহাটায় ১৮৭৬ সালে এবং তা ১৯৫৫ সালে বাতিল হয়ে ইউনিয়ন বোর্ডে পরিণত হয়। জেলার তৃতীয় মিউনিসিপ্যালিটি ছিল ১৮৮৪ সালে খুলনা শহরে।
১৮৮৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর মিউনিসিপ্যালিটির দ্বিতীয় সভায় ভাইস চেয়ারম্যান বাবু কৈলাসচন্দ্র কাঞ্জিলালের বাড়ি সত্যচরণ হাউস এ সাময়িক ব্যবস্থা হিসাবে মিউনিসিপ্যালিটির অফিস স্থাপন করা হয় এবং সেখানে কাজ চলতে থাকে। সে ভবনের অস্থিত্ব যদিও আজ আর নেই, তবে কারো কারো মতে ভবনটি বর্তমান পৌর ভবনের নিকটেই ছিল।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও খুলনা জেলার জন্ম
১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিলের সরকারী বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী খুলনা জেলার জন্ম হয় এবং তৎকালীন যশোর জেলার খুলনা ও বাগেরহাট মহাকুমা দুটি এবং ২৪ পরগণা জেলার সাতক্ষীরা মহাকুমা নিয়ে ঐ সালের ১ জুন থেকে এ নতুন জেলার কাজ শুরু হয়। প্রথম জেলা ম্যাজস্ট্রিটে ছিলেন মিঃ ডব্লুউ. এম. ক্লে- তার নামানুসারে শহরের ক্লে রোড হয়েছে।
খুসিক এর বর্তমান মেয়র
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি ২০০৮ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর সপ্তম মেয়র হিসেবে দায়িত্ত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতা এবং প্রাক্তন সংসদ সদস্য।
জনসংখ্যা এবং কর্পোরেশন কমিশনার
৪৫.৬৫ বর্গকিলোমিটারের এই খুসিক এর মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ। ৩১ টি ওয়ার্ড রয়েছে এ কর্পোরেশনের অধীনে। প্রতি ওয়ার্ড হতে একজন করে ওয়ার্ড কমিশনার এবং ১০ জন মহিলা কমিশনার এবং পদাধিকার বলে দায়িত্ত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কমিশনার ৫ জন সহ সোট ৪৬ জন কমিশনার নিয়ে খুসিক গঠিত।
খুলনা নগর ভবন
এ স্থান হলো সরকারী সংস্থার। খুলনা নগর ভবন মূলত সভাস্থল হিসেবে কাজ করে। সকল ধরনের সভা এবং সমাবেশ মূলত এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া ও কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় সকল ধরনের কাজ খুলনা নগর ভবনেই সংগঠিত হয়। এককথায় খুলনা নগর ভবন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মূল ভবন হিসেবে কাজ করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (khulna university) এর সকল তথ্য জানুন!
বাজেট ঘোষণা
যেখানে ২০-২১ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫০৪ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার টাকা। এই বছরের রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৮ কোটি ৮৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০৯ কোটি ১৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। বাজেট প্রমাণ করে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এর বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে।
কেসিসি’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অধুনিকায়ন
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন’ নামে এ প্রকল্পটি সরকারী অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৩ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে একনেকের সভায় অনুমোদন লাভ করে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ২০২১-২২ অর্থবছর হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত। প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলতি অর্থবছর থেকে শুরু হয়েছে। এ বছরের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কৃষি এবং অর্থনীতি
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের দিক দিয়ে খুলনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। অতিরিক্ত লবণাক্ততা ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে ভবিষ্যতে খুলনায় খাদ্য ঘাটতি চরম হওয়ার আশঙ্কা আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিগত সময় গুলোতে খুলনাতে কোন ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তা সবার ই জানা। বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
“ক্লিন”, ” সিইপিআর” এবং “খানি” এই তিনটি সংস্থার গবেষণা রিসার্চে বলা হয়েছে- খুলনা মহানগরীর ৪০ শতাংশ মানুষ পরের সপ্তাহের খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন এবং প্রায় ২৩ শতাংশ মানুষ একবেলা না খেয়ে থাকতে বাধ্য হন। এ ছাড়া দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও খুলনা জেলা সবসময়ই খাদ্য ঘাটতিতে থাকে। আধুনিক সময়ে এসে এই ধরণের তথ্য গুলো খুবই উদ্বেগজনক।
শেষকথা
খুলনা সিটি কর্পোরেশন বা সংক্ষেপে “খুসিক” বা “কেসিসি” অনেক দিক দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। কেসিসি মেয়র সবসময় নারী এবং শিশু শিক্ষা ও অধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন সেমিনার করে থাকেন। তবে দেশ যেখানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে সেখানে খুলনা কর্পোরেশন এ এখনো ব্যাপক খাদ্য সংকট চলছে।
বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে এসেছে খুলনা মহানগরীর ৪০ শতাংশ মানুষ পরের সপ্তাহের খাবার কি খাবেন সেটা নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকেন এবং প্রায় ২৩ শতাংশ মানুষ একবেলা না খেয়ে থাকতে বাধ্য হন। তবে এইসবের পরে ও সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক দিক দিয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত তৈরী করেছে।