খতিয়ান অনুসন্ধান নিয়ে ঝামেলায় পড়তে না চাইলে জেনে নিন এর বিস্তারিত তথ্য!
" " "
"
খতিয়ান অনুসন্ধান

খতিয়ান অনুসন্ধান নিয়ে ঝামেলায় পড়তে না চাইলে জেনে নিন এর বিস্তারিত তথ্য!

জায়গা-জমি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে যাদের জানা থাকে তাদের চাহিদা কিন্তু দেখার মতো। কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলে এসব এক্সপার্টদের কাছে ছুটে যেতে হয়। জেনে নিতে হয় প্রয়োজনীয় তথ্য, টেকনিক। কেমন হয়, যদি আপনার নিজেরই জায়গা-জমি বিষয়ক খুঁটিনাটি তথ্য জানা থাকে? এ-ব্যাপারে আগ্রহী রিডার্সদের টার্গেট করে আজ আমরা সাজিয়েছি আমাদের এই খতিয়ান অনুসন্ধান সম্পর্কিত আর্টিকেলটি। যেখানে একেবারে প্রাথমিক পরিচিতি থেকে শুরু করে এ-বিষয়ক বিভিন্ন জটিল তথ্য নিয়ে আলোচনার করা চেষ্টা করা হয়েছে। তবে আর দেরি করছি কেনো! চলুন যাওয়া যাক মূল আলোচনায়!

খতিয়ান কি?


জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করার টেকনিক সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জেনে নিতে হবে খতিয়ান কি বা এর পরিচিতি সম্পর্কে।একেবারে সহজ কথায় জমির খতিয়ান বলতে জমির হিসাব-নিকাশকে বোঝানো হয়ে থাকে। বিশেষ করে জায়গা-জমির মাপ, কে কত পাবে, কোন ক্ষেত্র ধরে পাবে সবকিছু নিয়ে প্রতীকী আলোচনা করা হয় খতিয়ানে!

" " "
"

খতিয়ান অনুসন্ধান করতে গিয়ে রেজাল্ট হিসেবে যে খতিয়ান পেপারটি পাওয়া যায় সেটি দেখতে একটি চার্টের মতো। যেখানে জমির মালিকের নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, ঠিকানা, দাগ নম্বর, ভূমির পরিমাণ, হিস্যাব অংশ, খাজনা ইত্যাদির হিসাব-নিকাশ একেবারে নির্ভুলভাবে উল্লেখ করা থাকে। খতিয়ানকে চাইলে ভূমির স্বত্বও বলা যায়।

খতিয়ান অনুসন্ধান কি?


মূলত খতিয়ান অনুসন্ধান একটি টেকনিক। যা ফলো করে খতিয়ান বা জায়গা-জমির স্বত্ব জোগাড় করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে এই খতিয়ান অনুসন্ধানের দুটো উপায় রয়েছে। এর একটি হয় অনলাইনের মাধ্যমে এবং আরেকটি হয় অফলাইনের মাধ্যমে। যদিও এই ডিজিটাল যুগে এসে অনলাইনের মাধ্যমেই খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পছন্দ করেন অনেকেই।

" " "
"

ই-খতিয়ান কি?


ই-খতিয়ান, ই-খতিয়ান অনুসন্ধান বা ই-পর্চা হলো এমন একটি সেবা যার সাহায্যে আপনি খুব সহজেই জমি সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়বে কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনের ইন্টারনেট সংযোগ। পাশাপাশি এক্ষেত্রে কেউ যদি সিএস, এস এ, আরএস সহ যে কোন খতিয়ান দেখা কিংবা সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করতে চায় তবে তাকে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে হবে। এ-নিয়ে আমরা আজকের এই আর্টিকেলের পরবর্তী যেকোনো অংশে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

খতিয়ান কত প্রকার ও কি কি?


খতিয়ান অনুসন্ধান করার টেকনিক সম্পর্কে জানানোর আগে বলে রাখা ভালো খতিয়ানের কিন্তু প্রকারভেদ রয়েছে। মূলত বাংলাদেশে ৪ ধরণের খতিয়ান প্রচলিত রয়েছে। এগুলি হলো:

১) সি, এস খতিয়ান
২) এস, এ খতিয়ান
৩) আর, এস খতিয়ান
৪) বি, এস খতিয়ান/সিটি জরিপ

এবার চলুন এই ৪ ধরণের খতিয়ান সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। এতে করে খতিয়ান অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় হিসেব-নিকেশ করতে আপনার খুব একটা সমস্যা হবে না।

সি, এস খতিয়ান


খতিয়ান অনুসন্ধানের জন্য দরকার প্রস্তুত করা খতিয়ান। যা দেখে সাধারণ মানুষ জায়গা-জমির অবস্থান, মালিকসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। এক্ষেত্রে সি, এস খতিয়ানের জন্য দরকারি খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় ব্রিটিশ আমলের ১৯৪০ সালে। বলে রাখা ভালো সে-সময় প্রস্তুত করা এই খতিয়ান হলো বাংলাদেশের প্রথম জেলাভিত্তিক খতিয়ান!

এস, এ খতিয়ান


এস, এ খতিয়ান হলো ১৯৫৬-৬৩ সালে তৈরি করা খতিয়ান স্বত্ব। যা সে-সময় ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ২৭ থেকে ৩১ ধারা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছিলো। যদিও বর্তমানে এস, এ খতিয়ান স্বত্বকে খতিয়ান অনুসন্ধানের কাজে খুব একটা ব্যবহার করা হয় না।

আর, এস খতিয়ান


এই আর, এস খতিয়ান সি, এস খতিয়ানের প্রায় ৫০ বছর পর থেকে চালু করা হয় এবং বর্তমানে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি খতিয়ান স্বত্ব। এই ধরণের খতিয়ান অনুসন্ধানে জমি, মালিক এবং দখলদারদের তথ্য পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা হলো এই ক্যাটাগরির খতিয়ান জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে এখনো বেশ গুরুত্বের সাথেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বি, এস খতিয়ান/সিটি জরিপ


বি, এস জরিপ বর্তমানে ঢাকা মহানগর জরিপ নামেও বেশ পরিচিত। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই খতিয়ানের কাজ করা হয়েছিলো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো এই সময়টাতে এই সিটি জরিপও তুলনামূলকভাবে আধুনিক ভূমি স্বত্ব।

খতিয়ানে কি কি থাকে?


খতিয়ানে থাকা বিষয়গুলি কতৃপক্ষ কতৃক নির্ধারিত থাকে। পাশাপাশি একই বিষয় বা পয়েন্টগুলি প্রতিটি খতিয়ানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। রাষ্ট্রীয় অর্জন বিধিমালার ১৮ নম্বর বিধিটি যদি একটু চেক করা যায়, তবে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে খতিয়ানে থাকা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে ক্লিয়ার হওয়া যাবে। তবে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি যেহেতু একটি গাইডলাইন টাইপের আর্টিকেল সেহেতু এই অংশে আমরা খতিয়ানে কি কি থাকে সে-সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো৷

প্রজা বা দখলদারের নাম
পিতার নাম
প্রজার সম্পূর্ণ ঠিকানা
দখলদারের অন্তর্ভুক্ত শ্রেণীর নাম
দখলদার কর্তৃক অধিকৃত জমির অবস্থান,
দখলদার কর্তৃক অধিকৃত জমির শ্রেণী
তাছাড়াও দখলদার কর্তৃক অধিকৃত জমির পরিমাণ
দখলদার কর্তৃক অধিকৃত জমির সীমানা
প্রজার জমির মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা
এষ্টেটের মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা
খতিয়ান প্রস্তুতের সময় খাজনা
গো-চরণ, ভূমি, বনভূমি ও মৎস খামারের হলে তার জন্য ধারণকৃত অর্থ।
খাজনা ধার্য করার টেকনিকের বিবরণ
কোনো কারণে খাজনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকলে সে সময়ে ওযে যে পদক্ষেপে তা বৃদ্ধি পায় তার বিবরণ
জমির কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে প্রজা কর্তৃক পানির ব্যবহার
কৃষি জমির পানি সরবরাহের জন্য যন্ত্রপাতি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত ডিলের লিখিত বিবরণ
দরকারি প্রজাস্বত্ব সম্পর্কিত বিশেষ শর্ত ও তার পরিণতি
জমিতে পথ চলার অধিকার
নির্দিষ্ট জমি সংলগ্ন অন্যান্য ইজমেন্টের অধিকার
জমি যদি নিস্কর হয় তার বিবরণ
জমির নির্ধারিত ও ন্যায়সঙ্গত খাজনা
খতিয়ানের নিজস্ব নম্বর, দাগ নম্বর এবং বাট্টা নম্বর
খতিয়ানের এরিয়া নম্বর, মৌজা নম্বর ও জে, এল নম্বরখতিয়ান অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভূমির স্বত্বে মূলত উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলিই দেওয়া থাকে।

খতিয়ান অনুসন্ধান করার উপায় কি?


কয়েক বছর আগেই জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভুগতে হতো প্রচন্ড দূর্ভোগ। তবে বর্তমানে সবকিছু ডিজিটালাইজড হওয়ায় সরকার জমির খতিয়ান অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ডিজিটাল টেকনিককে ব্যবহার করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশের যেকোনো সাধারণ নাগরিক মাত্র ৫ মিনিটে ঘরে বসেই খতিয়ান অনুসন্ধান করে নিতে পারে। চলুন আর্টিকেলের এই অংশে জেনে নেওয়া যাক অনলাইনে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করার উপায় সম্পর্কে।

অনলাইনের সাহায্যে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান করতে হলে নাগরিক কর্ণার ব্যবহার করতে হবে।

শুরুতে অনলাইন খতিয়ান সম্পর্কিত ওয়েবসাইট eporcha ডট কমে যেতে হবে।

নির্দিষ্ট খতিয়ান দেখার উদ্দেশ্যে নির্ধারিত বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও মৌজা বাছাই করে নিতে হবে।

পরবর্তী পেইজ ওপেন হলে সেখানে খতিয়ান নম্বর বা দাগ নম্বর দিন। এসব তথ্য না থাকলে মালিকানা নাম বা পিতা বা স্বামীর নাম দিয়ে খতিয়ান খুঁজতে হবে।

এবার সংখ্যা সম্পর্কিত ক্যাপচা এলে তা সলভ করে নিন।

সবশেষে “খুঁজুন” অপশনে ক্লিক করুন এবং পেয়ে যান নির্দিষ্ট ভূমির স্বত্ব!

খতিয়ান সংশোধনের উপায় কি?


মূলত খতিয়ান অনুসন্ধান করতে গিয়ে যদি খতিয়ান সংশোধন কিংবা পরিবর্তনের দরকার পড়ে, তবে বেশকিছু সহজ স্টেপ ফলো করতে পারেন। কিন্তু এখানে একটি ব্যাপারকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিত। খতিয়ান সংশোধনের ক্ষেত্রে যদি জমির মূল মালিক এবং দখলদার হওয়া সত্ত্বেও খতিয়ানে আপনার মালিকীয় এবং দখলীয় জমির মালিকানা থাকে তবেই নিচের স্টেপগুলি ফলো করা যাবে। চলুন এবারে খতিয়ান সংশোধনের উপায় বা টেকনিক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক৷

খতিয়ান সংশোধনের ক্ষেত্রে মালিককে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তার (যিনি বর্তমানে সহকারী কমিশনার) শরণাপন্ন হতে হবে।খতিয়ানে থাকা ভুল সংশোধনের জন্য প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর পূর্ববর্তী জরিপের কাগজপত্র, প্রাথমিক খাজনা বিবরণী, কালেক্টরের দপ্তরে সংরক্ষিত খতিয়ানের কপি এবং যে ধরণের খতিয়ান অনুসন্ধান দরকার তার একটি কপি সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিকে প্রধান করবেন।

এবার অপেক্ষার পালা। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এরপর যার নামে খতিয়ানে ভুল নাম এসেছে তাকে নোটিশ প্রদান করা হবে।সবশেষে একটি নির্ধারিত তারিখে উভয়পক্ষের শুনানি গ্রহণ ও দাখিলিয় গজপত্রাদি বিবেচনা করা হবে। যদি কোনো আপত্তি না থাকে তবে খতিয়ানের করণিক ভুল সংশোধনের আদেশ দেওয়া হবে।

আশা করি উপরের টেকনিকগুলি ফলো করতে পারলে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে গিয়ে চোখে পড়া ভুল কিংবা কোনো দরকারি সংশোধনির কাজ শেষ করা যাবে। অনেকের কাছেই ব্যাপারটিকে বেশ জটিল মনে হলেও ধৈর্য ধরে সঠিকভাবে আগানো গেলে কোনোধরণের জটিলতার সৃষ্টি হবে না।

ইতি কথা


খতিয়ান অনুসন্ধান করতে গিয়ে যারা বিপাকে পড়েন কিংবা জায়গা-জমি সম্পর্কিত হিসাব-নিকাশ নিয়ে যাদের প্রচন্ড ভয় রয়েছে…আশা করি এই আর্টিকেল তাদের কিছুটা হলেও উপকৃত করবে। তবুও যদি কোনো পয়েন্ট বুঝতে অসুবিধা হয় তবে তা আমাদের জানাতে পারেন। পরবর্তী আর্টিকেল উপভোগ করার অনুরোধ জানিয়ে আজকের মতো এখানেই ইতি টানছি।

" " "
"

1 thought on “খতিয়ান অনুসন্ধান নিয়ে ঝামেলায় পড়তে না চাইলে জেনে নিন এর বিস্তারিত তথ্য!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top